ডাইনোসরের দ্বীপ আইল অব ওয়াইট ভ্রমণ
কথা ছিল সবাই সকাল ১০.৩০ মিনিটে সাউথাম্পটন ষ্টেশনে থাকব। কিন্তু আমি মুস্তাফিজ ভাইকে সারপ্রাইজ দেবার জন্যে হেভেন্ট ষ্টেশনে নেমে তাদের ট্রেনে উঠলাম। মুস্তাফিজ ভাই আমার দিকে অনেকক্ষণ থাকিয়ে থাকলেন। হয়ত হিসাব মিলাতে পারছিলেন না। রুমেল ভাই তখনও ঘুমাচ্ছেন! রুমেল ভাইকে ঘুম থেকে তুললাম। বেচারা এমন ভাবে তাকালেন বুজতে পারলাম না তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন কিনা। চিরচেনা ভঙ্গিতে মুস্তাফিজ ভাই সকালের নাস্তা এগিয়ে দিলেন। আমি অবশ্য লন্ডনে নেমেই এক কাপ কফি খেয়েছি।
রাতের ঘুম সারছেন রুমেল ভাই
নির্ধারিত সময়েই আমরা সাউথাম্পটনে পৌঁছলাম। কথা ছিল ট্যাক্সি করে আমরা ফেরি টার্মিনালে যাব, কিন্তু এখান থেকে পর্যটকদের জন্যে ফ্রি বাসের ব্যাবস্তা দেখে বেশ ভাল লাগল। তবে রুমেল ভাই টার ক্যাপ বাসে ফেলে এসে মুখ খানা কিছুক্ষনের জন্যে কচু করে রাখলেন। জানালেন গত সাপ্তাহে টার ড্রাইভিং লাইসেন্সটাও হারিয়েছেন। বেচারার জন্যে একটু মায়া হল।
জাহাজের ডেকে সকালের নাস্তা
টিকেট সহ আনুসাংগিক কাজ শেষ করে আমরা জাহাজের ডেকে চলে এলাম। সকালের দখিনা বাতাস। তখনও সূর্য উঠেনি। মুস্তাফিজ ভাই আবারো নাস্তা নিয়ে হাজির! জাহাজের ডেকে এসে টাইটানিকের কথা মনে পড়ে গেল। এইতো! এখান থেকেই!! হ্যা, ঠিক এখান থেকেই আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে নিউ ইয়র্কের উদ্ধেশ্যে যাত্রা করে ছিল টাইটানিক। চোখ বন্ধ করে যাত্রীদের হৈচৈ শুনতে চাইলাম। চোখে ভেসে এল জ্যাক আর তার বন্ধুর ছুটে চলা আর রৌজের অসহায় চাহনি।
টাইটানিকের কথা ভাবছি
জাহাজ ছাড়ার সময় নাবিক ঘোষণা করলেন যেকোন ইমারজেন্সি অবস্থায় লাইফ বোট সহ যেকোন ক্ষেত্রে নারী এবং শিশুদের অগ্রাদিকার দিতে। আমার তো কেরোসিন অবস্থা! নিশ্চিত মৃত্যুর সময়ও লেডিস্ ফার্স্ট!! এর মধ্যে রুমেল ভাই বীরের মত ঘোষণা করলেন জাহাজ ডুবে গেলে তিনি মরতে রাজি আছেন। এতে নাকি তিনি ইতিহাসের অংশ হতে পারবেন। বুঝ টেলা!! মুস্তাফিজ ভাই এসব নিয়ে তেমন কোন চিন্তা করছেন বলে মনে হল না। জাহাজের ডেকে তখন বিভিন্ন ভাষার কিচির মিচির অতচ মুস্তাফিজ ভাই মাথায় জাম্পারের হোড লাগিয়ে নিশ্চিত মনে গরু কুরবানি করে চলেছেন।
ততক্ষণে আমাদের জাহাজ গন্তব্যের উদ্ধেশ্যে বন্দর ছেড়েছেন। একটু একটু করে ঝাপসা হচ্ছে সাউথাম্পটন। বেশ ব্যাস্ত বন্দর। অনেক গুলো জাহাজ চলেছে গন্তব্যে আবার অনেকেই নোঙ্গর ফেলছে। আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাউথাম্পটন থেকে আইল অব ওয়াইট –এ যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে। জাহাজের ডেকে ছবি তুলার হিড়িক পরে গেল।
জাহাজের ডেকে দুই বন্ধু
আইল অব ওয়াইট-এ নেমে আমরা নিডলস্ পার্কে যাবার কথা থাকলেও সেখানে ফোন করে জানতে পারলাম ক্যাবল কার কাজ করছেনা। কি আর করা। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ডাইনোসর অ্যাইল্যান্ডে যাচ্ছি। পেটে কিছু দেওয়া দরকার তাই পতি মধ্যে আমরা নিউ পোর্টে নেমে খাবার সারলাম।
খাবারের পাশে উনাকেই মানায় ভাল
নিউ পোর্ট থেকে আমাদের গন্তব্য সেনডাউন। অসাধারণ একটা গ্রাম। জীব বিজ্ঞানী ডারউইনের কথা মনে আছে? তার অনেক গুলান সময় এখানে কেটেছে। তার লেখা অরিজিন অব স্পেসিস বইয়ের সৃতি বিজড়িত এই গ্রামটি তার কথাই যেন স্বরন করিয়ে দিল। ইতিহাস খুজলে জানা যায় তিনি মোট তিন বার এখানে এসেছিলেন। তিনি যে খানে অবস্থান করেছিলেন আজও সেই জায়গা রেখে দেয়া হয়েছে অবিকল।
সেনডাউন গ্রামের একটি বাসা
আরও একটি বাসা
বাস এগিয়ে যাচ্ছে ডাইনোসর আইল্যান্ডে
একসময় আমরা ডাইনোসর আইল্যান্ডে চলে এলাম। অসাধারণ একটি জায়গা। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মত না। এখানে একটি ডাইনোসর মিউজিয়াম আছে। আছে একটি চিড়িয়াখানাও। তবে যারা ফসিল হান্টিংএ আসতে চান তাদের জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা জায়গা এটি। একটু মন দিয়ে খুজলেই পেয়ে যাবেন মিলিয়ন বছর পুরাতন কোন ফসিল। এই দ্বীপে অনেক গুলো ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয় এই দ্বিপে প্রায় ২৫ প্রজাতির ডাইনোসরের বাস ছিল।
ডাইনোসর ফসিল মিউজিয়াম
ডাইনোসর আইল্যান্ড
এমন সৈকত দেখলে কেবল হাটতে মন চায়
যারা যারা বসতে চান লাইনে দাঁড়ান
আকাশ সমুদ্র পাহাড়ের মাঝে ক্ষুদ্র এ আমি
সংরক্ষিত কয়েকটি ফসিলের পাশে
ফসিলের খুঁজে হেটে চলা
ফসিলের খুঁজে হেটে চলা
পাথরের ভেতরে সামুকের খোলাস
উড়তে মুন চায়
ছোট বেলার ইটাইটি খেলা
ডাইনোসোর আইল্যান্ড থেকে রাইড যাবার পথে
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য রাইড পেয়ার থেকে মেইন ল্যান্ড পোর্টস্ মাউথ।
রাইড পেয়ার
জাহাজের বেলকনি
দিগন্তজোড়া সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকা
জাহাজের ডেকে
আটলান্টিকে সূর্য ডুবার বেলায়
গন্তব্যে ছোটে চলা জাহাজ
বেকগ্রাউন্ড বলছে আমরা মেইন ল্যান্ডের একবারে কাছে চলে এসেছি
পোর্টস্ মাউথ হারবার
পোর্টস্ মাউথ হারবার
বাসে রাইড এসে আবার জাহাজে করে আমরা পোর্টস্ মাউথ চলে এলাম। এখানে একটি বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে আমরা খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। অতঃপর আবার নিজেদের গন্তব্যে ফিরে চলা।
আমি কিচ্চু খাই নাই