গহীন জঙ্গলে সাফারি ভ্রমন-৩
31/05/2013 00:00

পাহাড়ের উপর বাংলো থেকে দূর সমুদ্র
আজকের পর্বঃ আফ্রিকান আক্সপেরিয়ান্স-কার্নিভরি টেরিটরি-রয়েল বেঙ্গল টেরিটোরি
আগের পর্বে বলেছি এখনাকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপরে আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি দেয়া হয়েছিল। জায়গাটা আসলেই খুব সুন্দর। ছবির মত না বলে স্বপ্নের মত বলাই ভাল। কারন এমন একটি সুন্দর জায়গা মানুষ কেবল স্বপ্নেই কল্পনা করতে পারে। এক দিকে সমুদ্র, এক দিকে সমতল ভূমি আর অন্যদিকে ঘন-অরন্য। এখানে ভিজিটরদের রাত কাটানোর জন্যে অনেক গুলো বাংলো এবং কটেজ আছে। আছে খাবারের ব্যাবস্থাও। সেই সাথে এখানে বেশ কিছু বায়ুস্কুপ চুখে পড়ল।

বাংলোর সামনে এরকম অনেক গুলো বায়ুস্কুপ আছে যা দিয়ে অনেক দূরের বস্তু আর প্রাণী দেখা যায় খুব সহজে

এদের নাম মিরক্যাট, বাংলোর আসেপাশে এদের উপস্তিতি আনন্দ দিয়েছে খুব

আরও একজন, তিনি মাথা উঁচু করে অবাক হয়ে আমাদেরকে দেখছিলেন

তিনি আমাদের সারগে মহুদয়(এখানকার একটা টিভি বিজ্ঞাপনে এদের নাম সারগে)!
গাইডের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এখানে আপাতত আমরা সামান্য সময় যাত্রা বিরতি দেব এবং হালকা নাস্তা করব। পরে সম্পূর্ণ সাফারি শেষ হলে আমরা সন্ধায় আবার এখানে ফিরে আসব আমাদের মূল খাবার এবং বিনোদনের জন্যে।

সাফারি ট্রাকে উঠার জন্যে কিউ করেছে সবাই

এই পথ দিয়েই শুরু হল আমাদের নেমে চলা
বিরতির পর আমরা আবারো সাফারি ট্রাকে নিজেদের আসন নিলাম। এবার গাইড সিট বেল্ট অবশ্যই বাধতে হবে জানিয় দিল। ধিরে ধিরে গাড়ি চলতে শুরু করল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আমরা যখন নিচের দিকে নামছিলাম তখন খুব ভাল করে বুজতে পারলাম সিট বেল্টের গুরুত্ব। পাহাড়ের ঢাল নামার সময় কয়েকটি জেব্রা আর banteng কে ঘাস খেতে দেখে বেশ ভাল লাগল। তবে সিট বেল্টের কারনে ভালভাবে ছবি তুলতে না পারায় মনে মনে গাইডের গুষ্টি উদ্ধার করলাম।

ঘাস খেতে ব্যাস্ত জেব্রা (ছবিটি একেবারেই কাছে থেকে নেয়া)

গত পর্বেই আমরা এদের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, দেখতে অনেকটা হরিনের মত হলেও এরা আসলে banteng
এভাবে হেলে দুলে চলতে চলতে আমরা চলে এলাম কার্নিভরি টেরিটরিতে। এখানে এসে আমরা বেশ কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। আসলে কেউই চাই ছিল না সিট বেল্টের বাধনে আটকা থাকতে। তবে আমাদের বেশির ভাগ সহ যাত্রী গাড়িতেই বসে রইলেন। গাইড আমাদেরকে ম্যাপ বুজিয়ে দিয়ে বললেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেইজ ক্যাম্পে ফেরত যেতে।

আমরা যারা নেমে পড়েছিলাম

নীল গাই, দেখতে অনেকটা গরুর মতোই
কার্নিভরি টেরিটরিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল কয়েকটি নীল গাই। এর পর ম্যাপ দেখে দেখে জঙ্গলের ছোট ছোট ট্রেইল ধরে হেটে চলা।

এগুলো শুধু কাটা তার নয়, বিদ্যুৎও প্রবাহিত হচ্ছে এদের মধ্য দিয়ে। যাতে বন্য প্রাণীরা ট্রেইলে এসে ভিজিটরদের আক্রমন করতে না পারে।

বিদ্যুতের উৎস

আছে এরকম সৌর বিদ্যুতের ব্যাবস্থাও
এভাবে কিছুক্ষন হাটার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম বাকি দের থেকে আমি আলাদা হয়ে পড়েছি। তবে ভয় পেলাম না একা একা চলেতে বেশ লাগছিল। পাখির কিচিরমিচির আর হঠাৎ দু একটা বন্য প্রানির অপরিচিত শব্দ ছাড়া একেবারেই নিরব নিস্তব্দ বন। হঠাৎ শুকনো পাতার মড় মড় শব্দে দ্রুত পাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। অদ্ভুত সুন্দর একটা বানর। বসে বসে আপন মনে কি যেন খেতে ব্যাস্ত বেচারা। পাশে একটা ছোট খরগুসের ছানা দেখে সত্যি খুব ভাল লাগল। মনে হল নাহ্ আমি এখানে একা নই। এর পর অনেকক্ষণ আর কোন প্রানির দেখা নেই। শুধুই হেটে চলা।

আপন মনে খাবার খাচ্ছেন তিনি

আরও একজন

খরগোশ ছানা
কিছু দূর এসে ম্যাপ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি এখন যেখানে আছি এখানে আশে পাশে চিতা বাঘের উপস্তিতির সম্ভাবনা খুব। ম্যাপ এমনটাই বলছিল আমাকে। ব্যাগ থেকে ক্যামেরার ট্রাই পড বের করে ক্যামেরায় ৬৫০-২৬০০ মিঃ মিঃ টেলিফটো ল্যেন্স লাগিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। খালি চোখে দেখার পাশা পাশি ক্যামারা দিয়ে ঝুপ ঝাড় খুজতে লাগলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না।

শেষ বিকালের রোদ পোহাচ্ছেন দুই জন

খাবার খেতে ব্যাস্ত চিতা বাঘ

ভাগ্য ভাল আমি উনার খাবার হইনি
অতঃপর আবারো হেটে চলা। আর তেমন প্রাণী চোখে পড়ছিলনা যদিও ম্যাপ বলছিল এখানে কেট গ্রুপের ২০ টিরও অধিক প্রজাতির উপস্তিতি। তবে কার্নিভরি টেরিটরির একেবারে শেষের ধিকে এসে একজন সিংহের দেখা পেয়ে ছিলাম।

উনি রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন
রয়েল বেঙ্গল টেরিটরিতে প্রবেশ করে বাঘ মামার দেখা পেতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হলনা। আহা সুন্দর বনের বাঘ! দূর প্রবাসে নিজের দেশের মানুষ দেখলে যেমন অনুভূতি হয় বাঘ মামাকে দেখে তার থেকে একটুও কম অনুভূতি হয়নি। বাঘ মামা অরন্যে মিলিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এক পাও নড়লাম না। দূর থেকে মামারা আমার উপস্তিতি লক্ষ্য করছিলেন।

বিশ্রাম নিচ্ছেন একজন

কেমন আছিস ভাগিনা আমার? হয়ত এমনটাই বলতে চাচ্ছিলেন মামা

এদের মধ্যে ইস্কি গুড়ুম কিছু একটা আছে! সম্পূর্ণ সময়ই এরা পাশাপাশি ছিলেন

মামা মামির আরও একটি ছবি

মামা মামি

বিদায় মামা

বাঘ মামা রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পাহাড়ের উপর বাংলো থেকে দূর সমুদ্র
আজকের পর্বঃ আফ্রিকান আক্সপেরিয়ান্স-কার্নিভরি টেরিটরি-রয়েল বেঙ্গল টেরিটোরি
আগের পর্বে বলেছি এখনাকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপরে আমাদের প্রথম যাত্রা বিরতি দেয়া হয়েছিল। জায়গাটা আসলেই খুব সুন্দর। ছবির মত না বলে স্বপ্নের মত বলাই ভাল। কারন এমন একটি সুন্দর জায়গা মানুষ কেবল স্বপ্নেই কল্পনা করতে পারে। এক দিকে সমুদ্র, এক দিকে সমতল ভূমি আর অন্যদিকে ঘন-অরন্য। এখানে ভিজিটরদের রাত কাটানোর জন্যে অনেক গুলো বাংলো এবং কটেজ আছে। আছে খাবারের ব্যাবস্থাও। সেই সাথে এখানে বেশ কিছু বায়ুস্কুপ চুখে পড়ল।

বাংলোর সামনে এরকম অনেক গুলো বায়ুস্কুপ আছে যা দিয়ে অনেক দূরের বস্তু আর প্রাণী দেখা যায় খুব সহজে

এদের নাম মিরক্যাট, বাংলোর আসেপাশে এদের উপস্তিতি আনন্দ দিয়েছে খুব

আরও একজন, তিনি মাথা উঁচু করে অবাক হয়ে আমাদেরকে দেখছিলেন

তিনি আমাদের সারগে মহুদয়(এখানকার একটা টিভি বিজ্ঞাপনে এদের নাম সারগে)!
গাইডের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এখানে আপাতত আমরা সামান্য সময় যাত্রা বিরতি দেব এবং হালকা নাস্তা করব। পরে সম্পূর্ণ সাফারি শেষ হলে আমরা সন্ধায় আবার এখানে ফিরে আসব আমাদের মূল খাবার এবং বিনোদনের জন্যে।

সাফারি ট্রাকে উঠার জন্যে কিউ করেছে সবাই

এই পথ দিয়েই শুরু হল আমাদের নেমে চলা
বিরতির পর আমরা আবারো সাফারি ট্রাকে নিজেদের আসন নিলাম। এবার গাইড সিট বেল্ট অবশ্যই বাধতে হবে জানিয় দিল। ধিরে ধিরে গাড়ি চলতে শুরু করল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আমরা যখন নিচের দিকে নামছিলাম তখন খুব ভাল করে বুজতে পারলাম সিট বেল্টের গুরুত্ব। পাহাড়ের ঢাল নামার সময় কয়েকটি জেব্রা আর banteng কে ঘাস খেতে দেখে বেশ ভাল লাগল। তবে সিট বেল্টের কারনে ভালভাবে ছবি তুলতে না পারায় মনে মনে গাইডের গুষ্টি উদ্ধার করলাম।

ঘাস খেতে ব্যাস্ত জেব্রা (ছবিটি একেবারেই কাছে থেকে নেয়া)

গত পর্বেই আমরা এদের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, দেখতে অনেকটা হরিনের মত হলেও এরা আসলে banteng
এভাবে হেলে দুলে চলতে চলতে আমরা চলে এলাম কার্নিভরি টেরিটরিতে। এখানে এসে আমরা বেশ কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। আসলে কেউই চাই ছিল না সিট বেল্টের বাধনে আটকা থাকতে। তবে আমাদের বেশির ভাগ সহ যাত্রী গাড়িতেই বসে রইলেন। গাইড আমাদেরকে ম্যাপ বুজিয়ে দিয়ে বললেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেইজ ক্যাম্পে ফেরত যেতে।

আমরা যারা নেমে পড়েছিলাম

নীল গাই, দেখতে অনেকটা গরুর মতোই
কার্নিভরি টেরিটরিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল কয়েকটি নীল গাই। এর পর ম্যাপ দেখে দেখে জঙ্গলের ছোট ছোট ট্রেইল ধরে হেটে চলা।

এগুলো শুধু কাটা তার নয়, বিদ্যুৎও প্রবাহিত হচ্ছে এদের মধ্য দিয়ে। যাতে বন্য প্রাণীরা ট্রেইলে এসে ভিজিটরদের আক্রমন করতে না পারে।

বিদ্যুতের উৎস

আছে এরকম সৌর বিদ্যুতের ব্যাবস্থাও
এভাবে কিছুক্ষন হাটার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম বাকি দের থেকে আমি আলাদা হয়ে পড়েছি। তবে ভয় পেলাম না একা একা চলেতে বেশ লাগছিল। পাখির কিচিরমিচির আর হঠাৎ দু একটা বন্য প্রানির অপরিচিত শব্দ ছাড়া একেবারেই নিরব নিস্তব্দ বন। হঠাৎ শুকনো পাতার মড় মড় শব্দে দ্রুত পাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। অদ্ভুত সুন্দর একটা বানর। বসে বসে আপন মনে কি যেন খেতে ব্যাস্ত বেচারা। পাশে একটা ছোট খরগুসের ছানা দেখে সত্যি খুব ভাল লাগল। মনে হল নাহ্ আমি এখানে একা নই। এর পর অনেকক্ষণ আর কোন প্রানির দেখা নেই। শুধুই হেটে চলা।

আপন মনে খাবার খাচ্ছেন তিনি

আরও একজন

খরগোশ ছানা
কিছু দূর এসে ম্যাপ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি এখন যেখানে আছি এখানে আশে পাশে চিতা বাঘের উপস্তিতির সম্ভাবনা খুব। ম্যাপ এমনটাই বলছিল আমাকে। ব্যাগ থেকে ক্যামেরার ট্রাই পড বের করে ক্যামেরায় ৬৫০-২৬০০ মিঃ মিঃ টেলিফটো ল্যেন্স লাগিয়ে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম। খালি চোখে দেখার পাশা পাশি ক্যামারা দিয়ে ঝুপ ঝাড় খুজতে লাগলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না।

শেষ বিকালের রোদ পোহাচ্ছেন দুই জন

খাবার খেতে ব্যাস্ত চিতা বাঘ

ভাগ্য ভাল আমি উনার খাবার হইনি
অতঃপর আবারো হেটে চলা। আর তেমন প্রাণী চোখে পড়ছিলনা যদিও ম্যাপ বলছিল এখানে কেট গ্রুপের ২০ টিরও অধিক প্রজাতির উপস্তিতি। তবে কার্নিভরি টেরিটরির একেবারে শেষের ধিকে এসে একজন সিংহের দেখা পেয়ে ছিলাম।

উনি রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন
রয়েল বেঙ্গল টেরিটরিতে প্রবেশ করে বাঘ মামার দেখা পেতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হলনা। আহা সুন্দর বনের বাঘ! দূর প্রবাসে নিজের দেশের মানুষ দেখলে যেমন অনুভূতি হয় বাঘ মামাকে দেখে তার থেকে একটুও কম অনুভূতি হয়নি। বাঘ মামা অরন্যে মিলিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এক পাও নড়লাম না। দূর থেকে মামারা আমার উপস্তিতি লক্ষ্য করছিলেন।

বিশ্রাম নিচ্ছেন একজন

কেমন আছিস ভাগিনা আমার? হয়ত এমনটাই বলতে চাচ্ছিলেন মামা

এদের মধ্যে ইস্কি গুড়ুম কিছু একটা আছে! সম্পূর্ণ সময়ই এরা পাশাপাশি ছিলেন

মামা মামির আরও একটি ছবি

মামা মামি

বিদায় মামা

বাঘ মামা রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।