এসো কোরআন বুঝি-৩
আয়াতুল কুরসী (সূরাঃ আল-বাকারা, আয়াত ২৫৫)
তিলাওয়াতঃ
আয়াতুল কুরসীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
আমারা পূর্বের পর্বে আল্লাহ্র পরিচয় জেনেছিলাম। আজকের পর্বে আমরা তেমনি একটি আয়াত অধ্যায়ন করব। যেখানে আল্লাহ্ সূরা ইখলাসের মতোই তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এ আয়াতটি একক ভাবে আয়াতুল কুরসী নামেও পরিচিত। কুরসী একটি আরবি শব্দ যা এ আয়াতেই ব্যবহৃত হয়েছে, যার সহজ সরল বাংলা অনুবাদ দাড়ায় কর্তৃত্ব, ক্ষমতা বা রাষ্ট্রশক্তি। হাদিসে এ আয়াতটিকে আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আয়াত অধ্যায়ন করে আমার যা যা জানতে পারবঃ
ইতঃপূর্বে আমরা সূরা ইখলাস অধ্যায়ন করেছি। যা থেকে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার পরিচয় জানতে পেরেছি। এ আয়াতটি মূলত আরও গভীরে গিয়ে সৃষ্টি কর্তার পরিচয় তুলে ধরেছে। এ আয়াতটি অধ্যায়ন করে আমরা ভাল ভাবেই আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারব এবং পাশাপাশি কেউ তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে সহজেই বলে দিতে পারব, আমরা কোন আল্লাহ্র এবাদত করি এবং কি তাঁর পরিচয়।
আয়াতুল কুরসীর অনুবাদঃ
আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না। পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা।
উপরের আয়াতটি পড়ে আমরা যা বুঝতে পারিঃ
· মূর্খরা নিজেদের কল্পনা ও ভাববাদিতার জগতে বসে যত অসংখ্য উপাস্য, ইলাহ ও মাবুদ তৈরী করুক না কেন আসলে কিন্তু সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিপত্তি ও শাসন কর্তৃত্ব নিরংকুশভাবে একমাত্র সেই অবিনশ্বর সত্তার অংশীভূত, যাঁর জীবন কারো দান নয় বরং নিজস্ব জীবনী শক্তিকে যিনি স্বয়ং জীবিত এবং যাঁর শক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে এই বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনা।
· নিজের এই বিশাল সীমাহীন রাজ্যের যাবতীয় শাসন কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক তিনি একাই৷ তাঁর গুণাবলীতে দ্বিতীয় কোন সত্তার অংশীদারীত্ব নেই৷ তাঁর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও অধিকারেও নেই দ্বিতীয় কোন শরীক৷ কাজেই তাঁকে বাদ দিয়ে বা তার সাথে শরীক করে পৃথিবীতে বা আকাশে কোথাও আর কাউকে মাবুদ ইলাহ ও প্রভু বানানো হলে তা একটি নিরেট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই হয় না৷ এভাবে আসলে সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
· মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর সত্তাকে যারা নিজেদের দুর্বল অস্তিত্বের সদৃশ মনে করে এবং যাবতীয় মানবিক দুর্বলতাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে, এখানে তাদের চিন্তা ও ধারণার প্রতিবাদ করা হয়েছে। যেমন বাইবেলের বিবৃতি মতে, আল্লাহ ছয় দিনে পৃথিবী ও আকাশ তৈরী করেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেন।
· তিনি পৃথিবী ও আকাশের এবং এ দু'য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক৷ তাঁর মালিকানা, কর্তৃত্ব ও শাসন পরিচালনায় কারো এক বিন্দু পরিমাণও অংশ নেই৷ তাঁর পরে এই বিশ্ব-জাহানের অন্য যে কোন সত্তার কথাই চিন্তা করা হবে সে অবশ্যই হবে এই বিশ্ব-জগতের একটি সৃষ্টি । আর বিশ্ব-জগতের সৃষ্টি অবশ্যি হবে আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তাঁর দাস । তাঁর অংশীদর ও সমকক্ষ হবার কোন প্রশ্নই এখানে ওঠে না ।
· কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ হচ্ছে 'কুরসী'৷ সাধারণ এ শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ আয়াতটি আয়াতুল কুরসী নামে খ্যাত৷ এখানে মহান আল্লাহর এমন পূর্ণাংগ পরিচিতি পেশ করার হয়েছে, যার নজীর আর কোথাও নেই৷ তার হাদীসে একে কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতুল কুরসির শিক্ষাঃ
এ আয়াতটি অধ্যায়ন করে আমরা জানতে পারলাম আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা মহান আল্লাহ্ পাকের পরিচয়। আসুন আল্লাহকে আজ থেকে এভাবেই বিশ্বাস করি এবং কেউ তার পরিচয় জানতে চাইলে টিক এভাবেই তাদের কাছে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেই।